বেলডাঙ্গা জলিলিয়া ইসলামিয়া দারুল | হুদা মাদ্রাসা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন মাদ্রাসা। প্রাচীন এই মাদ্রাসা থেকে ফারেগ হয়ে বহু আলেম সমগ্র ভারতবর্ষে তথা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দ্বীনি শিক্ষার প্রসারের কাজে রত আছেন। জন্মলগ্ন থেকেই এই মাদ্রাসায় যেমন উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী আছেন ঠিক তেমনই এই মাদ্রাসার পরিচালকমন্ডলী এলাকার বিদ্ধজন এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত হয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। দ্বীনি শিক্ষার দানে সম্পূর্ণ সফল হওয়ার পর এলাকার বাসিন্দা মাদাসার দু'জন শিক্ষক- মাওলানা আবু বকর সাহেব ক্বাসেমী ও হাফেজ আব্দুর রাজ্জাক সাহেব বেলডাঙ্গা বাসীদের জন্য একটি নার্সারী স্কুল খোলার প্রস্তাব দেন। পরিচালন সমিতির সভায় সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত। কেননা সেই সময় পরিচালন কমিটিতেও দু'জন H.S. স্কুলের প্রধান শিক্ষক, হাই এবং প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ছাড়াও অনেক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। ২০১১ সালের জানুয়ারী মাস থেকে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হল। স্কুলের নাম রাখা হল- বেলডাঙ্গা জলিলিয়া শিশু একাডেমী। খুলে গেল বেলডাঙ্গার মুসলিম শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ ইসলামিক পরিমন্ডলে দ্বীনি শিক্ষা সহ উচ্চমানের আধুনিক শিক্ষার দ্বার। শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের প্রকৃত মানুষ তৈরী করা। যার দ্বারা সমাজ এবং দেশ উপকৃত হবে। সেই শিক্ষিত সমাজের কাছে সমাজের অন্যান্য অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষত লোক আহেলিত, শোষিত বা বঞ্চিত হবে না। সে কারণে ঐ শিক্ষিত সমাজের প্রতিটি সদস্যই হবেন শৃঙ্খলা পরায়ণ, ন্যায় নিষ্ঠ, তীক্ষ্ণ বিবেক বোধ সম্পন্ন এবং সহানুভূতিশীল। শৈশবেই যদি এই সমস্তগুণের অনুশীলন তাদের দ্বারা করানো হয় তবে এটা অন্তত আশা করা যায় তারা অমানুষ হবে না। এখানে দ্বীনি শিক্ষা মানে ধর্মীয় শিক্ষায় সুপন্ডিত হওয়া নয় প্রকৃত মানবিক গুণের সঞ্চারণে অন্তরলোক আলোকিত করা। অল্পবয়সে যদি এই সমস্ত গুনের অনুশীলন হয় তবে তার স্থায়িত্ব সারাজীবন থাকেই। সে কারণেই এই লক্ষ্যকেই সামনে রেখে যাত্রা হল এই একাডেমীর। স্কুল তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলের পরিকাঠামো নির্ম এবং বাচ্চাদের উপযুক্ত পরিবেশ দেওয়ার। চলে এল। প্রয়োজন হয়ে পড়ল উপযুক্ত শিক্ষিক। নিয়োগের। হাফেজ সাহেবের প্রচেষ্টায় এবং কাপাসডাঙ্গার আজাদ আলী সাহেবের সেই সময় এক লক্ষ ইটের দানে প্রাথমিকভাবে স্কুল চালানোর মতো পরিকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হল। নিয়ত সহীহ থাকলেই কোন কিছুই আটকায় না। চায়না বেগম নামে এক ম্যাডামের খোঁজ পাওয়া গেল, যিনি ইরেজী মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষকতা করেছেন এবং ইংরেজী সহ দু-তিনটি ভাষায় কথা বলতে পারেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি নার্সারীতে খেদমত করার জন্য রাজী হলেন। আরোও তিন-চার ম্যাডাম নিয়োগ করে ২০১০ সালেনভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে প্রচার চালিয়ে ছাত্র ভর্তি করে ২০১১ সালের জানুয়ারীতে ক্লাস আরম্ভ হল। মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষকতায় স্কুল হওয়ায ছাত্র পেতে অসুবিধা হয়নি। এলাকার সমস্ত সমাজে মাওলানা সাহেবদের যাতায়াতের ফলে অল্প সময়ে আশাতীত ছাত্র ভর্তি হয়ে স্কুল প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে উঠল। দু-তিন বছরের ভিতরেই বিদ্যালয়ের যে পরিকাঠামো নির্মান করা হয়েছিল সেখানে স্থান সংকুলান দুরহ হয়ে উঠল। ফলে মাদ্রাসার উত্তরদিকে রাস্তার ধারে দোতলার উপর অনেকগুলি শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করে পঠন-পাঠন এর ব্যবস্থা করা হল। কিন্তু সেখানে একেবারে খোলা রাস্তার ধারে ছাত্র-ছাত্রীদের আসা-যাওয়া বিপজ্জনক হয়ে উঠল। ফলে পরিচালন কমিটির সবাই মাদ্রাসার ভিতরে নিরাপদ স্থানে শিশু একাডেমীর ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হল। এই সময় অপ্রত্যাশিতভাবে কয়েক লক্ষ টাকা অনুদান পাওয়ার ফলে ভবন নির্মান অনেকটাই সহজ হলো। ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে চার তলার ফাউন্ডেশন দিয়ে প্রথম তলের মধ্যে সিঁড়ি সহ আটটি শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করা হলো। ভবনের পাশে একই ছাদের তলে ব্যবস্থা করা হলো অনেকগুলি শৌচাগারের। পর্ববর্তীবৎসরে আবার দ্বিতলে শৌচাগার সহ আটটি শ্রেণীকক্ষ নির্মান করা হলো। বছর তিনেকের ভিতর একইভাবে তিন তলায় শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করে শ্রেণীকক্ষের সমস্ত অভাব পূরণ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষিকার আলাদা রুম সহ শিক্ষিকাদের রুম, কম্পিউটার রুম, করনিকের আলাদা রুম সব মিলিয়ে সমস্ত অসুবিধা দূর করে একটি আদর্শ পরিকাঠামোযুক্ত বিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত করা গেছে। বর্তমানে সমস্ত বিল্ডিং রং করে একাডেমীর নাম সহ ভবনের নাম করণ করা হয়েছে- মাওলানা আবুল কালাম আজাদ মঞ্জিল। যে কোন বিদ্যালয়ের মান নির্ভর করে তার পঠন-পাঠনের উন্নতির উপর। আমাদের এইএকাডেমিতে প্রায় সব শিক্ষিকাই উচ্চ শিক্ষিতা এবং প্রশিক্ষনপ্রাপ্তা। মাতৃস্নেহ মমতায়, সন্তানসম ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে তাঁরা ভীষণ পারদর্শী। বেলডাঙ্গা এলাকায় যে সমস্ত প্রাচীন নার্সারী স্কুল আছে সবকিছুতেই সেই সমস্ত স্কুলের সমতুল বা কোন দিক দিয়ে সেগুলির থেকে এগিয়ে। এখানে নিয়মিতভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের আবৃতি, গজল, দোয়া, দরুদ, অঙ্কণ, ক্যুইজ প্রতিযোগিতার অনুশীলন করানো হয়। শিক্ষিকারা ক্লাসে Joy ful learning (আনন্দ দায়ক পাঠদান) পদ্ধতির মাধ্যমে ক্লাসের পরিবেশ হালকা ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠশিখনে উৎসাহিত প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করে শিক্ষ... অধুনিকীকরন করা হয়েছে। বাচ্চাদের শিক্ষায় শিক্ষিকাদের যেমন ভূমিকা আছে তেমনই অভিভাবকদের ভূমিকাও অপরিসীম। দুঃখের বিষয় আমাদের মুসলিম সমাজে সচেতন